২৪খবরবিডি: 'আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনকালীন জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেদের অধীনে চায় নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় বলে মনে করছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী সংলাপে প্রাপ্ত সুপারিশের আলাকে এই মত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।'
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল স্বাক্ষরিত সংলাপের এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে এই মতামত তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল সংলাপের সারসংক্ষেপটি (প্রতিবেদন) নিবন্ধিত ২৮টি দল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চাইলেও কোনো দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করতে পারে না এবং সে ধরনের কোনো প্রয়াস নির্বাচন কমিশন নেবে না বলেও সারসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, সংলাপে অনুপস্থিত রাজনৈতিক দলসমূহকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা কি সম্ভব? এবং এ ধরনের কোনো প্রয়াস নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করবে না। সংলাপের সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'নির্বাচন কমিশন মনে করে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালীন ইসির অধীনে ন্যস্ত করার বিষয়টিও সংবিধানের আলোকে বিবেচনা হওয়া প্রয়োজন।'
এ ছাড়া নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে দলগুলোয় আপত্তি এবং সমর্থন দুটোই রয়েছে জানিয়ে বলা হয়, সার্বিক বিষয়ে এখনো স্থির কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক দল ছাড়াও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ইসি ভিন্নভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানানো হবে। প্রকাশিত সারসংক্ষেপে বলা হয়, দেশে একই দিনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয় বিধায় প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অসামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা অপ্রতুল হতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনা: 'চার মন্ত্রণালয় চায় ইসি'
এ কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবটি যৌক্তিক মনে করে ইসি। জুলাই মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল স্বাক্ষরিত 'ইসির সঙ্গে নিবন্ধিত দলগুলোর সংলাপ থেকে প্রাপ্ত মতামত ও পরামর্শ এবং কমিশনের পর্যালোচনা ও মতামত' শীর্ষক এ সারসংক্ষেপ ইসির ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। যদিও বিগত কমিশনগুলো সংলাপের প্রতিবেদন বইয়ের মধ্যেই রেখেছিল।
সারসংক্ষেপের সমাপনীতে বলা হয়, মতামতগুলো কমিশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছে। রাজনীতিতে গণতন্ত্রের সুস্থ চর্চা প্রয়োজন। কমিশন আশা করে আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অহিংস পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠিত হবে। কমিশনের বিশ্বাস এটিই জনপ্রত্যাশা। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে অভিন্ন প্রত্যাশা পোষণ করে। এই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন, সরকার, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং রাজনৈতিক দলসহ সবার ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন। গণমাধ্যমে পাঠানো এ সারসংক্ষেপের বিষয়ে ইসির যুগ্ম সচিব ও জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানান, ইসির নির্দেশনায় সংলাপে অংশ নেওয়া ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে অংশ নেওয়া ২৮টি দলকে তা পাঠানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছেও ইসির পর্যালোচনা ও মতামত পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ সংলাপে ২৮টি দল অংশ নেয়। দুটি দলকে সেপ্টেম্বরে সংলাপে অংশ নেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে। নয়টি দল সংলাপে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে।